সিলেট ৬ই ডিসেম্বর, ২০১৯ ইং | ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪২৬ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১:৩৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৩, ২০১৯
সুরমা মেইল ডেস্ক : স্বচ্ছল জীবনের আশায় বিয়ের সাত মাস পর গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরব যান মৌলভীবাজারের এক তরুণী (২০)। স্থানীয় এক দালালের দেখানো রঙিন স্বপ্নে বিভোর হয়ে স্বামীকে রেখে এ পথ বেছে নেন তিনি। কিন্তু সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় যখন তিনি সৌদিতে পৌঁছান।
গত ২৮ এপ্রিল সৌদি আরবের দাম্মাম বিমানবন্দরে নেমেই ওই তরুণী জানতে পারেন তাকে যৌনকর্মী হিসেবে চার লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এরপর সেখান থেকে মালিকের বাড়িতে যাওয়ার পর পরই শুরু হয় নির্যাতন। প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, মারধর আর অনাহারে একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন ঘটনার এক পর্যায়ে সৌদি পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
গত ২৬ নভেম্বর সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন ওই তরুণী। দেশে ফেরার দুদিন পর শ্রীমঙ্গলের ‘মুক্তি মেডিকেয়ার’ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানেই এমন নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন ওই তরুণী।
তরুণীর ভাষায় ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা :
মুক্তি মেডিকেয়ারে চিকিৎসাধীন ওই তরুণীর সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের কথা হলে সৌদি আরবে নির্যাতনের ভয়ংকার বিবরণ দেন তিনি। তার ভাষায়, যৌনকর্মে রাজি না হলে তার ওপর চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। একটি অফিসে রেখে প্রতিদিন কয়েকজন পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করতেন বলে জানান তিনি।
‘জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে আমার বুক, স্পর্শকাতর জায়গা ওরা পুড়িয়ে দিয়েছে। তার দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হাত-পা ও উরুতে জখম করে দিয়েছে। দলবেঁধে ৪/৫ জন মিলে ধর্ষণ করত, তখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলতাম।’
২০ বছর বয়সী ওই তরুণীর বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ৯ নম্বর ইসলামপুর ইউনিয়নে। বর্তমানে অর্থের অভাবে চিকিৎসা অসমাপ্ত রেখেই গত রোববার (০১ ডিসেম্বর) তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়।
‘মুক্তি মেডিকেয়ার’ হাসপাতালের প্রধান সেবিকা দীপ্তি দত্ত সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘মেয়েটার যৌনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পোড়া ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ক্ষতগুলো সারতে সময় লাগবে।’
মানসিকভাবে ওই তরুণীর অসুস্থতার কথা জানিয়ে হাসপাতলের চিকিৎসক সাধন চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘মাঝে মাঝে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে আবল-তাবল বকছে। দ্রুত তাকে মানসিক চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন।’
ওই তরুণীর মা বলেন, ‘আমার ভালো মেয়ে বিদেশ থেকে এসেছে আধমরা হয়ে। টাকা রোজগারের আশায় গেল, একটি টাকাও ওকে দেওয়া হয়নি।’
এদিকে, দেশে থাকা ওই তরুণীর স্বামী নির্যাতনের কথা ‘আদম ব্যাপারী’ মোস্তফাকে জানালে তিনি ‘মিথ্যা কথা’ বলে উড়িয়ে দেন। তরুণীর স্বামী পুলিশ ও সাংবাদিকের ভয় দেখালে তিনি দাবি করেন, যে বাড়িতে কাজ পেয়েছিলেন, সেখান থেকে ২ হাজার ২শ’ রিয়াল নিয়ে পালিয়ে গেছেন ওই তরুণী।
শেষ পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের শরণাপন্ন হন ওই তরুণীর স্বামী। প্রশাসনের তৎপরতায় ছয় মাস ২৬ দিন পর বাংলাদেশ সরকার, দূতাবাস ও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহায়তায় দেশে ফেরেন তার স্ত্রী।
যেভাবে ওই তরুণী এ পথে পা বাড়িয়েছিলেন :
তার স্বামী জানান, বাঁশের কাজ করে অভাব অনটনে কোনো মতে তাদের সংসার চলছিল। মোস্তফা তখন তার স্ত্রীকে বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। তাতে প্রথমে রাজি না হলে পরে অন্য দালাল দিয়ে প্রচুর টাকা আয়ের লোভ দেখায়।
সে সময় বলা হয়েছিল, মোস্তফা নিজের মেয়ে পরিচয়ে বিদেশে পাঠাবে, সেখানে সে যত্নে থাকবে, পাসপোর্ট-ভিসা সব করে দেওয়া হবে, কোনো টাকা লাগবে না। এতসব প্রলোভনে রাজি হয়ে যান ওই তরুণী আর তার স্বামী।
বিদেশ যাওয়ার পরপরই তার স্ত্রীর ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু হয় জানিয়ে তার স্বামী বলেন, ‘প্রথম কয়েকদিন যোগাযোগ করলেও পরে আর তার স্ত্রী যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে এক সৌদি প্রবাসী পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আমার স্ত্রীকে নির্যাতনের খবর দেয়। সঙ্গে নির্যাতনের ছবি আর ভিডিও পাঠায়।’
তবে, এসব অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা আদম ব্যাপারী মোস্তফার বাড়িতে গেলে তিনি বাড়িতে নেই বলে জানানো হয়। পরে মোবাইলে ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে ওই তরুণীর অবস্থা :
অর্থাভাবে ওই তরুণীকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানানো হলে কমলগঞ্জের উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল হক বলেন, ‘সোমবারের মধ্যেই তিনি মেয়েটির চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য ব্যবস্থা নেবেন। একই সঙ্গে মেয়েটির পরিবারের সদস্যদের ডেকে মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ তবে বিচার না হলে এসব ঘটনা বাড়তেই থাকবে বলে জানান ইউএনও।
গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদিতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়, ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসছেন অনেক নারী। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৮৫০ জন নারী দেশে ফিরে এসেছেন বলে বিভিন্ন সংগঠনগুলোর তথ্যে পাওয়া গেছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধে পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে যৌথভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। সূত্র : আমাদেরসময়
প্রধান উপদেষ্টা বীজিত চৌধুরী,
উপদেষ্টা মোঃ ফয়েজ আহমদ (দৌলত)
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
উপদেষ্টা মোঃ মুজিবুর রহমান (ডালিম)
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
নির্বাহী সম্পাদক : ফয়সল আহমদ
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিসঃ রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা)
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইলঃ
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি