অস্তিত্বহীন প্রকল্পেও আর্থিক বরাদ্দ

প্রকাশিত: ৭:৩৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩, ২০২০

অস্তিত্বহীন প্রকল্পেও আর্থিক বরাদ্দ

সুরমা মেইল ডেস্ক ,

 

ভুয়া প্রকল্পে মাগুরা জেলা পরিষদের বরাদ্দ নিয়ে সদর উপজেলার কুশবাড়িয়া গ্রামে গত এক সপ্তাহ ধরে সামাজিক অস্থিরতা চলছে।

 

ওই গ্রামের মধ্যপাড়ায় সার্বজনীন কবরস্থান না থাকলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির তহবিল থেকে সেখানে কবরস্থান সংস্কারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে; যা নিয়ে গ্রামের মোল্যা বংশের লোকজনের মধ্যে শুরু হয়েছে সামাজিক বিরোধ। ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও।

 

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু এ প্রকল্পটিই নয়, মাগুরায় জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে চলতি অর্থবছরে এমন অসংখ্য ভুয়া প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে; যা নিয়ে পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

 

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি-এডিপির সাধারণ বরাদ্দের আওতায় সর্বসাকুল্যে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার মোট ৩৭৮টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। যেখানে ১ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন অর্থের প্রকল্প রয়েছে।

 

গত ৫ জুলাই মাগুরা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই প্রকল্প তালিকায় অস্তিত্ব নেই এমন অসংখ্য নাম রয়েছে।

 

তালিকার ২৭নং ক্রমিকে বেরইল পলিতা কলেজের উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেটি প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়েছে। আবার ২৮নং ক্রমিকে একই কলেজের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজারটাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেটি টেন্ডারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।

 

মাগুরায় সদর উপজেলার বেরইল পলিতা গ্রামে এমনকি ওই ইউনিয়নের একমাত্র কলেজ নাজির আহমেদ কলেজ। অথচ অস্তিত্ববিহীন ‘বেরইল পলিতা কলেজ’ নামে দুটি প্রকল্পে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

 

শুধু তাই নয়, কামরুজ্জামান নামে এক ব্যক্তি প্রকল্প সভাপতি হিসেবে কম্পিউটারে ‘বেরইল পলিতা কলেজ’ নামে প্রিন্ট প্যাডে প্রকল্পের অর্থের জন্য আবেদনও করেছেন।

 

প্রকল্প তালিকায় দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, রাস্তা-ঘাট, মসজিদ-মন্দির, শ্মশান-কবরস্থান সংস্কার ছাড়াও নানা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

 

কিন্তু জেলা শহরের পৌর এলাকার মোল্লাপাড়ায় সাধারণ মানুষের দাফনের জন্যে কোনো কবরস্থান না থাকলেও ওই পাড়ার কবরস্থানের নামে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।

 

একইভাবে সদর উপজেলার জগদল চৌরাস্তার মোড়, তেঘইর ফারুকের বাড়ির পাশে, কুশবাড়িয়া মধ্যপাড়ায় সার্বজনীন কবরস্থানের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বারও ‘অস্তিত্ব নেই’ বলে জানিয়েছেন।

 

আবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এডিপির আওতায় ৪০৪টি প্রকল্পের অনুকূলে মোট ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও সেখানে নামসর্বস্ব অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং অস্তিত্ববিহীন প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে দেখা যায়।

 

মাগুরার শালিখা উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের চিহ্নিত একমাত্র স্মৃতিসৌধ তালখড়ি গ্রামে। অথচ এটি ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিনার নির্মাণ এবং শালিখা উপজেলা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিসৌধ সংস্কার নামে দুটি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে; যার কোনো অস্তিত্ব নেই বলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সরদার ফারুক আহমেদসহ অন্যরা জানিয়েছেন।

 

এ অর্থবছরে মাগুরা আদর্শ কলেজের শহীদ মিনারের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও সেখানে কোনো শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। অথচ চলতি অর্থবছরে একই কাজের জন্যে নতুন করে আরও ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বলে তালিকায় দেখা যায়।

 

জেলা পরিষদের ফুল বাগানে পুরনো কিছু ফুলের গাছ রয়েছে। সেখানে পরিচর্যা ও গাছ লাগানোর জন্যে গত অর্থবছরে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও তার কাজের নমুনা দেখা যায়নি। অথচ নতুন করে চলতি অর্থবছরে আরও ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

 

এসব প্রকল্পে বরাদ্দের বিষয়ে মাগুরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুন্ডু বলেন, জেলার মানুষকে সেবা দেয়ার লক্ষ্য নিয়েই পরিষদে বসেছি। নেয়ার জন্যে নয়। কাজের তালিকা প্রস্তুতের জন্য পরিষদের মেম্বারদের ওপর নির্ভর করতে হয়। সেক্ষেত্রে তারা ভুয়া কোনো নাম দিয়েছে কিনা- সেটি খতিয়ে দেখা হবে।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

রাফি গার্ডেন সুপার হোস্টেল।

 

আমাদের ভিজিটর
Flag Counter

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com