আ’লীগ থেকে বহিষ্কার জাহাঙ্গীর, হারাতে পারেন মেয়র পদও

প্রকাশিত: ২:১৪ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০২১

আ’লীগ থেকে বহিষ্কার জাহাঙ্গীর, হারাতে পারেন মেয়র পদও

সুরমা মেইল ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির ভিডিও ভাইরাল হওয়ার জেরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের দলীয় সদস্যপদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

 

শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ক্ষমতাসীন দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

জাহাঙ্গীর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে তিনি রাজধানী লাগোয়া ক্ষমতাসীন দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা হয়ে উঠেছিলেন গত কয়েক বছরে।

 

মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জানিয়েছেন, বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

 

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে ঘরোয়া আলোচনায় কটূক্তির ভিডিও ফাঁসের মাস দুয়েক পর শুক্রবার ক্ষমতাসীন দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক।

 

প্রায় দুই মাস ধরে জাহাঙ্গীরের শাস্তির দাবিতে ক্ষমতাসীন দলের একাংশের বিক্ষোভের মধ্যে শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এদিন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে, সে ইঙ্গিত আগেই ছিল। মেয়র বলেছিলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা তিনি মেনে নেবেন।

 

গত ২২ সেপ্টেম্বর ঘরোয়া আলোচনার রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের একটি অংশ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভে নামে। সে সময় মেয়র ছিলেন দেশের বাইরে। দেশে ফিরে ২৪ অক্টোবর তিনি পাল্টা সমাবেশ ডেকে নিজের শক্তি দেখান। সেই সমাবেশের সময় তার বিরোধীদের পুলিশ সরিয়ে নেয়ার ঘটনায় তিনি পার পেয়ে যান কি না, তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।

 

ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে গত ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরের ব্যাখ্যা চায় আওয়ামী লীগ। এতে তাকে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়। ১৮ অক্টোবর সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই মেয়র তার ব্যাখ্যা দেন বলে জানান। ব্যাখ্যায় কী লিখেছেন- এমন প্রশ্নে তার বক্তব্য ছিল ‘আমি বলেছি এটা মিথ্যা, বানোয়াট। আমাকে ফাঁসানোর জন্য, ছোট করার জন্য এটা করা হয়েছে।’

 

শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখেই অপেক্ষা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার যিনি প্রধান, আমার গার্জিয়ান (অভিভাবক), উনি যেটা ভালো মনে করেন সেটাই হবে।’

 

২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, ১৯ নভেম্বর তাদের দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

 

এই বৈঠকের আগে কয়েক দিনে মেয়রের পক্ষে-বিপক্ষে পোস্টারে সয়লাব হয়ে যায় গাজীপুর। মেয়রবিরোধীরা দাবি করতে থাকেন, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আসছে। তবে তার অনুসারীরা দাবি করতে থাকেন, তার কিছুই হবে না।

 

গত ২২ সেপ্টেম্বর মেয়র জাহাঙ্গীরের একটি ঘরোয়া আলোচনার ৪ মিনিটের একটি রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এর একটি অংশ ছিল ভিডিও, একটি অংশ ছিল অডিও। ভিডিওটির প্রথম দিকে মেয়র জাহাঙ্গীরকে নীল রঙের জামা পরে চেয়ারে বসে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। ভিডিওটির প্রথম দিকে মেয়রকে দেখা গেলে বাকি অংশে শুধু অডিও বক্তব্য শোনা যায়। কিছু কিছু অংশ ছিল অস্পষ্ট। ভিডিওটি কে বা কারা কবে ধারণ করেছে, সেটি জানা যায়নি। কারাই-বা সেটি ফেসবুকে ছেড়েছে, সেটিও অজানা।

 

ভিডিওটির শুরুতে মেয়র জাহাঙ্গীরকে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে শোনা যায়। তার দাবি, বঙ্গবন্ধু তার স্বার্থে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। পাকিস্তান ভাঙার পেছনে রাষ্ট্রপতি হওয়ার বাসনা কাজ করেছে বলেও মনে করেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা। তার ধারণা, বাংলাদেশ স্বাধীন না হয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে থাকলে পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত জাতি থাকত এখানকার মানুষ।

 

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের প্রসঙ্গ টেনে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি রাসেল সাহেবকে এইখানে নিয়া ফালাইছি। আমি চাইছি রাসেল সাহেব ভুল করুক। আমি ইচ্ছা করেই চাইছি হেও মিছিলটাতে এটেন্ড করুক।’

 

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজমত উল্লাহ আমারে জীবনে মারার লাইগা লোক কন্টাক্ট করছে, সব করছে। এখন সে আমার কর্মী হইছে। …আমারে জিগায় কী করছ? আমারে কয়দিন জিগাইছে কী করো, কেমনে সম্ভব? হেও সব জানে না! আমি তো খেলা জিতছি।’

 

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি মন্ত্রীরে নিয়া মাথা ঘামাই না। জাহিদ আহসান রাসেল আছে না? তারে নিয়া আমি এক মিনিটও চিন্তা করি না। খালি জাস্ট শুইনা রাখো, বিশ্বাস করার দরকার নাই। আমি চিন্তা করলাম সে তো মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠই। দরকারটা কী আমার এখানে, পরিবর্তনে কী হইব? এখানে পরিবর্তনের লাভটা কার?’

 

গত তিন বছরেও গাজীপুর সিটি করপোরেশনে প্যানেল মেয়র নির্বাচন করা হয়নি। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে।

 

এবিষয়ে ভিডিওটিতে মেয়রকে বলতে শোনা যায়, ‘প্যানেল মেয়র দেই না। দিলে কী হইব? আমারে কি কাউন্সিলররা মেয়র বানাইছে? আমার কি মেয়রগিরি যাইবগা? যেমন আমি এখানে প্যানেল মেয়র করি নাই। রাসেল এমপি অনেকরে মেয়র বানাইয়া দিতেছে, অনেকরে কাউন্সিলর বানাইয়া দিতেছে। প্রধানমন্ত্রী আরেকজনরে ভারপ্রাপ্ত দিব?’

 

বাংলাদেশের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাব্যক্তি তার নিকটাত্মীয় উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বাতাসটা আমার কাছে বইলা যায়।’

 

বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এমনকি হেফাজতের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলার কথাও বলেন মেয়র জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ‘আমি জামায়াতের সাথে চলি না? বিএনপির সাথে চলি না? অন্য পার্টি আছে না সবার সাথেই তো কথা বলি। এই যে আমার সাথে ঘণ্টা তিনেক আগেও বাবুনগরী (হেফাজতের প্রয়াত আমির) প্রায় ৪৭ মিনিট কথা বলছে। সে আসতে চায়। আমি কথা বলছি না? ধীরাশ্রম, ঝাঝর, চান্দরা আছে ৮/১০ বিঘা, দিঘিরচালা আছে ১৬ বিঘা, তেলিপাড়াও আছে। আমার এখানে সাড়ে তিন শ বিঘা জমি আছে। এই নির্বাচনের সময়েও দশ হাজার কোটি টাকা আনছি।’

 

রেকর্ডটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার সময় জাহাঙ্গীর ছিলেন দেশের বাইরে। পরে ৫০ মিনিটের আরেকটি রেকর্ড প্রকাশ হয়। এটি থেকেই কেটে কেটে আগের ৪ মিনিটের রেকর্ডটি ফাঁস হয়েছিল।


এদিকে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ হারাতে পারেন মহানগর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।

 

আ’লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন ইঙ্গিত দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সভায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা অফিসিয়ালি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে।


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com