জৈন্তাপুরে মৃত ভাইকে দেখতে গিয়ে পথেই লাশ হলেন তারা

প্রকাশিত: ৩:৫০ অপরাহ্ণ, মে ২, ২০২১

জৈন্তাপুরে মৃত ভাইকে দেখতে গিয়ে পথেই লাশ হলেন তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, জৈন্তাপুর : রাতে চাচাতো ভাই আব্দুল কাইয়ুমের মৃত্যুর খবর পায় ভাই জাকারিয়া। তখন থেকেই ভোরের অপেক্ষা। ভোরে সেই ভাইয়ের মৃতদেহ দেখতে জাকারিয়া পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে বের হন দুটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে। একটি সিএনজি গন্তব্যে পৌঁছলেও আরেকটি থেমে যায় ঘাতক ট্রাকের চাপায়। এতে নিমিষেই রক্তাক্ত হয়ে উঠে সড়ক। একজনের দাফনের বদলে প্রস্তুতি নেয়া হয় একই পরিবারের চারজনসহ পাচঁজনের দাফনের।

আহত জাকারিয়া 

জাকারিয়া দম্পতি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে পরে আছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই বেড-এ।

 

আরও পড়ুন : জৈন্তাপুরে ট্রাকচাপায় শিশুসহ একই পরিবারের ৫ জন নিহত

 

অথচ প্রিয় ভাইয়ের মৃত্যুতে শোকাবহ জাকারিয়া এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে বিশ্বাসই হচ্ছে না। তাঁর কেবলই মনে হচ্ছে এটি স্বপ্ন, এটি বিভ্রম। সবকিছু আগের মতোই আছে। আছে প্রিয় ভাতিজি সাদিয়া। ঘুমোচ্ছে আদরের শাহাদাত। অন্যরাও যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে উঠছেন। সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। কোথাও কেউ থেমে নেই।

 

তবে আঘাত আর পরিবারের সদস্যদের হারানোর বেদনায় মূর্ছা গেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচ তলার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন মো. জাকারিয়া। যখনই পরিবারের কথা মনে হচ্ছে তখনই ফুঁপিয়ে কাঁদছেন তিনি। বারবার বলছেন, একটা সিএনজি ভালো মতোই পৌঁছে গেছে। আর সামান্যর জন্য আমাদেরটা কেন পৌঁছালো না। হঠাৎ করেই একটি ট্রাক এসে আমাদের সিএনজিকে চাপা দিল।

 

এদিকে, তাঁর স্ত্রী হাসিনা বেগম চিকিৎসাধীন আছেন হাসপাতালের ৪র্থ তলার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে। তবে তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।

 

দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া হাবিবুন্নেসার মরদেহের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন ভাই মাহমুদ আলী। তিনি দুর্ঘটনার খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে আসেন। তবে হাসপাতালের নানা জায়গায় খোঁজেও বোনকে না পেয়ে খোঁজ নেন জরুরি বিভাগে। সেখান থেকে জানানো হয় হাসপাতালে আনার পথেই মারা যান হাবিবুন্নেসা। তাঁর মরদেহ জরুরি বিভাগের নির্দিষ্ট রুমে রাখা আছে। সেখানে গিয়ে স্ট্রেচারে বোনের নিথর দেহ পরে থাকতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

 

হাবিবুন্নেসার ছেলে দিলদার হোসেন জানান, ‌‌‌‌‘সিলেট রাগীব রাবেয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া আব্দুল কাইয়ূম মামার মরদেহ দেখতে মামা, দুই মামী, মামাতো ভাই-বোন, মাসহ কয়েকজন সকালে দুটি সিএনজি যোগে রওনা দেন। তবে পথিমধ্যে তাদের দুটি সিএনজির একটিকে চাপা দেয় একটি ট্রাক। এতে ছোট মামী, তাঁর ছেলে-মেয়ে, আমার মা ও গাড়ির ড্রাইভার মারা যান। আর বড় মামা ও মামী আহত হন। তাদেরকে পুলিশ উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। বর্তমানে তারা চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন।’

 

এর আগে রোববার (২ মে) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সিলেটের জৈন্তাপুরে ট্রাকচাপায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার পাঁচ যাত্রী নিহত হন।

 

নিহতরা হলেন- পাখিবিল এলাকার মৃত আরব আলীর ছেলে হোসেন আহমদ (৩৫), জামাল মিয়ার স্ত্রী সাফিয়া বেগম (২৯), জামাল মিয়ার মেয়ে সাদিয়া (৭), জামাল মিয়ার ছেলে শাহাদাত (৫ মাস), মৃত হাফিজ মিয়ার স্ত্রী হাবিবুন্নেসা (৩৩)।

 

আর আহতরা হলেন- পাখিবিল এলাকার মৃত আরজান আলীর ছেলে জাকারিয়া ও জাকারিয়া স্ত্রী হাসিনা বেগম। তাদের উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

 

স্থানীয়রা জানান, জৈন্তাপুর ফেরিঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী একটি সিএনজি অটোরিকশা হঠাৎ মহাসড়কে উঠলে দ্রুতগামী একটি ট্রাক অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে চারজন ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

রাফি গার্ডেন সুপার হোস্টেল।

 

আমাদের ভিজিটর
Flag Counter

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com