সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:২৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০১৮
লাল যুদ্ধ জামা পরে জলের উপর যেন অজস্র শাপলা সেনা। অনুগত সৈন্যর মতো তারা দাঁড়িয়ে আছে মাথা উচু করে। তাদের যুদ্ধটাই হয়তো পর্যটককে মুগদ্ধ করা, তাইতো লাল রং ছিটিয়ে জট বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকলেও পর্যটকের নৌকাকে পথ করে দিতে কুর্নিশ করে সরে যাচ্ছে দু-দিকে। বলছি সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার লাল শাপলার রাজ্য খ্যাত ডিবির হাওয়ের কথা। হাওরের একদিকে আকাশের সাথে হেলান দিয়ে মনে হয় দাঁড়িয়ে আছে মেঘালয়ের সু-উচ্চ সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে সাদা মেঘের উড়াউড়ি, তার উপরে বিস্তীর্ণ নীল আকাশ আর আকাশের নিচে শাপলা রাজ্যে লালের হুলিখেলা। প্রকৃতির এমন রূপ শোভার কোলাজে বুঁদ হতে ভোরের আলো ফোটে উঠার আগেই এখানে জমে উঠে পর্যটকের ভীড়। সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিলটি বহন করছে জৈয়ন্তীয়া রাজা রাম সিংহের স্মৃতি।
পাহাড়, মেঘ, আকাশ,আর লাল শাপলার অপূর্ব মিতালীর সাথে ইতিহাসের ঝাঁপি। এসব বৈশিষ্ট্যই এ বিলকে আলাদা করেছে দেশের অন্য যেকোন সাধারন শাপলা বিল থেকে। শুধুই সৌন্দর্য বা ইতিহাস নয়, বর্তমানে শাপলা এখানে স্থানীয়দের করে দিয়েছে জীবিকার পথ তাই সব ছাপিয়ে শাপলাই এখন লাইমলাইটে। সব মিলিয়ে অপরূপ এ বিলটি দেখতে যাওয়ার লোভ সামলানো দায়।
ভোরের আলো ফোঁটলেই কলকলিয়ে হেসে উঠে শাপলা রাজ্য। সে হাসি উপভোগ করতে হলে যেতে হয় প্রথম ভোরে। প্রকৃতির এ নিয়ম মেনে ভোরের আলো ফোটার আগেই গত ১৬ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে ঘুমঘুম চোখে, চোখ কচলাতে কচলাতে বন্ধু নাসির, মারুফ, সাইফুদ্দিন সহ আমরা ছুটে চলি লাল রাজ্যের অভিমুখে। “ওহে শ্যম” গানের সাথে মৃদু হাওয়ায় ছন্দে ফরফর করে চলছে আমাদের বাহন নোয়া গাড়ি। জৈন্তাপুর বাজারে এসে হাল্কা নাস্তার জন্য হাল্কা বিরতি। সকালের নাস্তায় ডিম ভাজি আর পরটার ম্যানুতে শরীরটাকে চাঙ্গা করে আবারো ছুটে চলা। জৈন্তাপুর বাজার থেকে মিনিট পাঁচেক সময় ধরে এগুতোই চোখে পড়ে ডিবির হাওরের সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ডই নির্দেশ করছে গ্রামের এ সরু পথ দিয়ে যেতে হবে ডিবির হাওর। সামনে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে কুয়াশার মতো উড়ছে সাদা মেঘ। মনে হয় এইতো কয়েকহাত এগুলেই ছুঁয়া যাবে মেঘের পাহাড়। কিন্তু যতোই সামনে যাই মরিচিকা হয়ে মেঘও সরে যায় পেছনে। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে শাপলার বিল, তবে আলো তখনো ভালো করে ফোঁটেনি তাই আপাতত মেঘের রোমাঞ্চেই মজে থাকি। মেঘের পেছনে ছুটতে ছুটতে বাংলাদেশ-ভারত সীমানার দাগে দাঁড়িয়ে যেতে হয়, আর সামনে যাওয়া যাবেনা, নিয়ম নেই। তবে ছবি তুলতে বাধা দেওয়ার এখতিয়ার নেই কারো। তাই আমাদের ক্যামেরা এখানেই অপেন করি। ছবতি তুলতে গিয়ে চোখের দূরবীনে ধরা পড়ে রাজা রাম সিংহের স্মৃতি মন্দির। শাপলা রাজ্যর পাশে প্রকৃতির এ সৌন্দর্য আর ইতিহাসের অস্থিত্ব আমাদের জন্য উপরি পাওনা। কিছু সময়ের ভেতরে ভোরের আলো পুরোপুরী ফোঁটতে শুরু করেছে। এবার লালের রাজ্যে আমাদের স্বাগত জানাতে যেন উন্মুখ শাপলা সেনারা। নৌকা নিয়ে লাল শাপলার রাজ্যে তাই আমাদের পদার্পন। শাপলার হাসিতে হৃদয় ছোঁয়া মুগদ্ধতা মিলেমিশে একাকার। তাইতো সেরা এ মূহুর্তটি স্মৃতির ফ্রেমে ধরে রাখতে ছোট ভাই কাওছারের ঝটপট ক্লিকে ক্যামেরা বন্ধি করি সময়ের সেরা মুহুর্ত গুলো।
ইতিহাস আছে
ডিবি বিল, ইয়াম, হরফকাটা ও কেন্দ্রী বিলসহ চারটি বিলকে একসাথে বলা হয় ডিবির হাওর। বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া ইতিহাস ও লোক মুখে প্রচলিত গল্পগাঁথা থেকে জানা যায় জৈয়ন্তীয়া রাজ্যের অন্যতম রাজা রাম সিংহের স্মৃতি বিজড়িত এ হাওড়ের নানান কথা। শত্রুরা রাম সিংহকে এ বিলেই ডুবিয়ে হত্যা করেছিল, বিলেই হয়েছ তার সলীল সমাধী। হরফকাটা ও ডিবি বিলের মধ্যস্থলে তার সমাধিস্থল। বিল থেকে কিছু দূরে দৃষ্টি দিলে চোখে পড়ে দুইশ বছরের পুরোনো একটি জীর্ন মন্দির যা নির্মিত হয়েছিল রাম সিংহের সম্মানে।
যখন যাবেন :
বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত শাপলা বিলে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। ভোরের আলো ফোঁটার আগেই বের হয়ে পৌছাতে হবে প্রথম ভোরে। কারন দিনের আলো বাড়তে বাড়তে ম্লান হয়ে যায় শাপলার হাসি।
যেভাবে যাবেন :
খুব ভোরে লোকাল গাড়ি পাওয়া কঠিন তাই সিলেটের বাস স্ট্যন্ড, বা বন্দর বাজার থেকে সিএনজি, লেগুনা,কিংবা প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে জৈন্তাপুরে আসতে হবে। জৈন্তাপুর বাজার থেকে দুই কিঃমিঃ সামনে এগুলেই হাতের ডান পাশে ডিবির হাওরে যাওয়ার জন্য গ্রামের সরু পথ। এ পথ ধরে এক কিঃমিঃ সামনে এগুলেই লাল শাপলার হাতছানি।
লেখক : আলমগীর হোসাইন- চিকনাগুল, জৈন্তাপুর, সিলেট।
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো: কামরুল হাসান
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি