বন্ধু জানাজার পেছনে সুধীর বাবুর কান্না

প্রকাশিত: ৩:২৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১

বন্ধু জানাজার পেছনে সুধীর বাবুর কান্না

সুরমা মেইল ডেস্ক : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী বাজারের ব্যবসায়ী মীর হোসেন সওদাগর (৬৮) ও সুধীর বাবু (৭০)। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব তাঁদের।

 

মঙ্গলবার (০৭ সেপ্টেম্বর) রাতে বার্ধক্যজনিত কারণে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান মীর হোসেন। তার নামাজের সময় সবার পেছনে গাছের গুঁড়িতে বসে কাঁদছিলেন সুধীর বাবু (৭০)। হিন্দু ধর্মের হয়েও জানাজার নামাজে বন্ধুর বিদায় লগ্নেও সঙ্গে ছিলেন। তার উপস্থিতি ও কান্না দেখে আগত সব মুসল্লিদের মনে দাগ কেটেছে। প্রকাশ পেয়েছে বন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা।

 

এমন একটি ছবি বুধবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পোস্টে লেখা হয়, সত্যিকারের বন্ধুত্ব আসলেই এমন হয়। যে বন্ধুত্ব জাত দেখে না, ধর্ম দেখে না, ধনী-গরিবের ভেদাভেদ চেনে না।

 

জানা গেছে, দুই বন্ধু কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ইউনিয়নের চাপাচো গ্রামের বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকে এক সঙ্গে আড্ডা আর খেলাধুলা করে বড় হয়েছে। এক সময় গুণবতী বাজারে ব্যবসা শুরু করেন দুইজন। মুদির দোকান ছিল আমীর হোসেনের। তার পাশেই পান বিক্রি করতেন সুধীর বাবু। সুযোগ পেলেই বন্ধুর দোকানে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিতেন। অবসর সময় কাটত বেশ।

 

কিন্তু মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আমীর হোসেন। বুধবার তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনলে বন্ধুকে একনজর দেখার জন্য ছুটে যান সুধীর বাবু। আকস্মিক মৃত্যু তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। বন্ধুকে কবর দেওয়া পর্যন্ত পাশেই ছিলেন তিনি। বুধবার বেলা ১১টায় তার জানাজা হয়। তারপর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

 

গুণবতী বাজারের স্থানীয় বাসিন্দা জামাল উদ্দিন টুটুল বলেন, আমির ও সুধীর বাবু দুজনেই খুব ভাল মানুষ। তারা ভাল বন্ধুও ছিলেন। বন্ধুর জন্য বন্ধু এভাবে কান্না করতে কখনও দেখিনি। এমন ঘটনা আমাদের এলাকার সবাইকে অবাক করেছে। সত্যিকারের বন্ধুত্বের বন্ধন কত শক্তিশালী হতে পারে তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সুধীর বাবু।

 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক তার ফেসবুক আইডিতে এই ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘আমরা মারা গেলে সুধীর বাবুরা এসে চোখের জল ফেলবে এটাই আমাদের সমাজ এবং দেশ। আর সুধীর বাবুর মৃত লাশের শেষ যাত্রা যদি আমাদের সম্মুখ দিয়ে ঘটে, তবে তার লাশের সম্মানে দাঁড়িয়ে যাব। এটাই ইসলাম, এটাই বাংলাদেশ। সবাই মিলে মিশে থাকি। যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করি। সবার জন্য শুভকামনা।’

 

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

রাফি গার্ডেন সুপার হোস্টেল।

 

আমাদের ভিজিটর
Flag Counter

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com