বরিশালের ঘটনা সমঝোতা

প্রকাশিত: ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২১

বরিশালের ঘটনা সমঝোতা

সুরমা মেইল ডেস্ক : বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সরকারি বাসভবনে হামলা চালানো এবং পরবর্তীতে পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশ জুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

 

সম্প্রতি সময়ের এই ঘটনা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা রীতিমতো বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন। অবশেষে সমঝোতার মাধ্যমে দেশজুড়ে আলোচিত সেই ঘটনার ইতি টানা হলো।

 

বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে এক বৈঠকে রোববার (২২ আগস্ট) দিবাগত রাতে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং সদর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানকে নিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়। তবে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি গণমাধ্যম কর্মীদের দেওয়া হয়নি।

 

বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের ওই বৈঠকে ছিলেন, বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদল, জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার, রেঞ্জ ডিআইজি এস.এম আক্তারুজ্জামান, মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন কবির, পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন, সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 

এর আগে রোববার বিকেলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ‘বরিশালের ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, শিগগিরই সমস্যার সমাধান হচ্ছে। অবশেষে রাতেই সেই সমাধান এলো।

 

তার আগে রোববার (২২ আগস্ট) বরিশাল সদর উপজেলার ইউএনও মুনিবুর রহমানসহ ১০৯ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলার আবেদন করেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা।

 

অতিরিক্ত চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লালর আদালতে বিসিসি’র প্যানেল মেয়র-২ রফিকুল ইসলাম খোকন ও রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হালদারের করা পৃথক দুই আবদনে ইউএনও ছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম, সিটি মেয়রসহ তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার বাদী কোতোয়ালি থানার এসআই শাহজালাল মল্লিক ও ইউএনওর বাসভবনে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের আসামি করা হয়েছে।

 

রোববার (২২ আগস্ট) দুপুরে মামলার আবেদন দুটি আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আমলে নিয়ে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

 

ওই মামলার আবেদন দুটিতে বাদীদ্বয় ইউএনও মুনিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশনের কাজে বাধাদান, বিনা উসকানিতে বিসিসির কর্মচারীদের ওপর গুলিবর্ষণের নির্দেশ দেয়া, হামলা, গুলিবর্ষণের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির অঙ্গহানির অভিযোগ করেছেন।

 

তারা আরও উল্লেখ করেছেন, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে শত্রুপক্ষের দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে ইউএনও মুনিবুর রহমান ও কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলামসহ তাদের সহযোগীরা হত্যার উদ্যেশ্যে গুলি বর্ষণ করা, মারধর, ভাংচুর এবং ১০০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি করা হয়েছে।

 

বাদী পক্ষের আইনজীবী এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস এবং দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, এই মামলায় আসামিরা দোষী প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজার বিধান রয়েছে। দু’টি মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবীরা ন্যায় বিচারের আশা করেন। কোতয়ালী মডেল থানা এই সংক্রান্ত মামলা গ্রহণ না করায় আদালতে নালিশি মামলা দায়ের করার কথাও বলেন আইনজীবীরা।

 

অপরদিকে গত বুধবারের ঘটনার পরদিন কোতয়ালী মডেল থানায় দায়ের হওয়া দুই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ২২ জনের মধ্যে ১৮ জনের জামিনের জন্য রোববার একই আদালতে আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। আদালত শুনানি শেষে তাদের জামিন না মঞ্জুর করেন এবং বিচারক মো. মাসুম বিল্লাহ কারাভ্যন্তরে আসামিদের সু-চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন আসামি পক্ষের আইনজীবী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গোলাম মাসউদ বাবলু।

 

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১৮ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণকে কেন্দ্র করে ইউএনওর বাসভবনে কয়েক দফা হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের রুখতে গিয়ে আনসার সদস্যদের রাবার বুলেট ছুড়তে হয়। পরে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মধ্যরাত পর্যন্ত পুলিশের সাথে জেলা-মহানগর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মীদের কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

 

এতে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম পিপিএম, ইউএনওর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য ফারুক হোসেন ও নাসির উদ্দিনসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগের অর্ধশত নেতাকর্মী। এসব ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে পুথক দুটি মামলা করা হয়। দুটিতেই বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়।

 

এছাড়া বিসিসির কয়েকজন কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামাসহ মোট ৬০২ জনকে আসামি করা হয়েছে। যার মধ্য থেকে ইতোমধ্যে ২২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

রাফি গার্ডেন সুপার হোস্টেল।

 

আমাদের ভিজিটর
Flag Counter

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com