সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:০৬ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০২১
ডা: তানভীরুজ্জামান : ১৯৮৯ সালে, জাতিসংঘ বিশ্ব জনসংখ্যা পাঁচ বিলিয়নে পৌঁছানোর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি বছর ১১ জুলাইকে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। উদ্দেশ্য ছিল “দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির স্বাস্থ্য, উন্নয়ন এবং পরিবেশগত প্রভাব” এর দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বিশ্বের জনসংখ্যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৯ বিলিয়ন সুতরাং দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কে এখনই সবাইকে সচেতন করা খুবই জরুরী। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস হিসাবে পালন করা হচ্ছে।
দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- “অধিকার ও পছন্দই মূল কথা: প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার প্রাধান্য পেলে কাক্সিক্ষত জন্মহারে সমাধান মেলে।”
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য, ‘জনসংখ্যা বিস্ফোরণ’ একটি বিশাল উদ্বেগের বিষয় ছিলো। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে এসেছি, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের (সরকারী ও বেসরকারী) প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশ এখন একটি সাফল্যের গল্প। ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের মোট প্রজনন হার (টিএফআর) ৬ এরও বেশি ছিলো, এটি এখন কমে দাঁড়িয়েছে ২.৩। একইভাবে জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্যের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য সূচকগুলির ক্ষেত্রে, বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের অগ্রগতি অনুকরণীয়।
১৯৭৫ সালে, বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা পদ্বতি গ্রহীতার হার (সিপিআর) সর্বনিম্নের মধ্যে একটি ছিল- কেবলমাত্র প্রায় আট শতাংশ সক্ষম দম্পতি যেকোন একটি পরিবার পরিকল্পনা পদ্বতি ব্যবহার করতেন। পরিবার পরিকল্পনা বিষয়টি অনেকক্ষেত্রেই সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ হিসাবে বিবেচিত হত এবং কেউই এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চাইতেন না। এখন পরিস্থিতি অনেক পাল্টেছে, পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে মহিলারা এখন পুরুষদের সামনেও নির্দ্বিধায় কথা বলেন। বর্তমানে বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহীতার হার (সিপিআর) ৬২ ভাগ। অর্থাৎ প্রায় ৬২ শতাংশ। সক্ষম দম্পতি যেকোন একটি আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এ এক অভূতপূর্ব অগ্রগতি, বিশেষত একটি রক্ষণশীল মুসলিম সমাজের জন্য।
দুর্ভাগ্যক্রমে এই অগ্রগতি এখন অনেকাংশেই স্থবির রয়েছে। টিএফআর গত দশক বা তার ও বেশি সময় ধরে একই আছে এবং সিপিআরও তাই রয়েছে। মাতৃমৃত্যু হার (এমএমআর) এবং অন্যান্য মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সূচকগুলিও ২০১০ সাল থেকে স্থবির রয়েছে। এর অর্থ আমরা সম্ভবত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের (এসডিজি) বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সঠিক ট্র্যাকে নেই।
কোভিড-১৯ মহামারী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের (এসডিজি) বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বজুডে মানুষ, সম্প্রদায় এবং অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলছে। এটি যৌন ও প্রজননজনিত স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জটিলতা, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা, পরিবারের মধ্যে সহিংসতা এবং বাল্যবিবাহের মতো সমস্যাগুলোকে বাড়িয়ে তুলছে, যা নারী ও মেয়েদের জীবনকে প্রভাবিত করছে। এরই প্রেক্ষিতে, নারী ও মেয়েদের স্বাস্থ্য এবং মহামারী ও মহামারীজনিত আর্থ-সামাজিক ক্ষতিগ্রস্থদের রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
কোভিড-১৯ কেবলমাত্র আমাদের ধারাবাহিক অগ্রগতি নয়, বিগত কয়েক দশক ধরে আমাদের অর্জিত অর্জনকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা, নন-কোভিড স্বাস্থ্যসেবাখাতগুলিতে বিশেষ করে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে মহামারীর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। তারা ভ্যাকসিনেশন কাভারেজ, প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারী, পরিবার পরিকল্পনা পদ্বতি গ্রহণ এবং অন্যান্য পরিষেবাগুলির নিম্নমুখী প্রবণতাকে চিহ্নিত করেছেন। এর কারণ হিসাবে তারা উভয় চাহিদা এবং সরবরাহের সংকটকে চিহ্নিত করেছেন। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীর জন্য সরবরাহের চেইনগুলি ব্যাহত হচ্ছে, যা পরিবার পরিকল্পনা পদ্বতিগুলির প্রাপ্যতাকে প্রভাবিত করছে এবং অনাকাংখিত গর্ভধারনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। যেহেতু বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই লকডাউন চলছে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করোনা মোকাবেলায় লড়াই করছে। তাই যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবাগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হচ্ছে।
এটি স্পষ্ট যে, আমরা এসডিজির অনেক সূচকে পিছিয়ে রয়েছি, আমরা ইতিমধ্যে মাতৃমৃত্যু, মা ও শিশু স্বাস্থ্য এবং প্রজননস্বাস্থ্য সংক্রান্ত লক্ষ্যগুলি অর্জনে অনেক পিছিয়ে রয়েছি।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের জরিপ অনুসারে মাতৃমৃত্যুর হার ১৭৩ যা এসডিজির লক্ষ্য অনুসারে, আমাদের ২০৩০ সালের মধ্যে ৭০ এ পৌঁছানোর কথা রয়েছে। সাম্প্রতিক ট্র্যাক রেকর্ড এবং বর্তমান কোভিড-১৯ এর সামগ্রিক অবস্থাকে বিবেচনা করলে, আমাদের এসডিজির অনেক লক্ষমাত্রা অর্জন করার সম্ভাবনা খুব কম। কিছু কঠোর, সাহসী এবং সময়পোযোগী (কোভিড-১৯ কে বিবেচনায় নিয়ে) পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এসডিজির অনেক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমরা ব্যর্থ হতে পারি, যা সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যখাতে অর্জিত আমাদের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
লেখক- বিশিষ্ট চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো: কামরুল হাসান
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি