‘মুক্তির মঞ্চ’সহ কোটি টাকার সম্পদ দখল উদ্ধারে জেলা প্রশাসকের নির্দেশ

প্রকাশিত: ১১:১৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৯, ২০১৯

‘মুক্তির মঞ্চ’সহ কোটি টাকার সম্পদ দখল উদ্ধারে জেলা প্রশাসকের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ : একাত্তরের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সেক্টরের ‘মুক্তির মঞ্চ’ সহ দকলে থাকা কয়েক কোটি টাকার সরকারি সম্পদ উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক।

 

সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

 

তিনি বলেন, রোববার জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের দাবির আলোকে তাহিরপুরের ইউএনও ও সহকারি কমিশনারকে (ভুমি) ওই উপজেলার টেকেরঘাটে কথিত কিন্ডার গার্ডেনের নামে একাত্তরের ‘মুক্তির মঞ্চ’ সহ কয়েক কোটি টাকা মুল্যের সরকারি জমি উদ্ধারে আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 

প্রসঙ্গত, এনিয়ে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগপত্র সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) প্রতি বছর দেয়া হয়।

 

কিন্তু অদৃশ্য কারণে দখল হওয়া সরকারি জমি ও ‘মুক্তির মঞ্চ’ উদ্ধার কেবল এতদিন নোটিশেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন প্রশাসন।

 

এ দখল বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের তরং গ্রামের প্রয়াত আব্দুর রউফ তালুকদারের ছেলে শামীম আহমদ তালুকদারসহ বেশ ক’জন প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে।

 

মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বড়ছড়া মৌজার ১নং খতিয়ানভুক্ত এসএ ও আরএস দাগে ৭৬.৩৬ একর সরকারি জমির ভেতর থাকা ট্যাকেরঘাট সাব সেক্টরের ’৭১-এর মুক্তির মঞ্চ, সমাবেশ স্থল, ছোট মাঠ, তিনটি ভবন, ভবনের ভেতর থাকা জিনিসপত্র প্রায় এক একর জমি দখলে নেন পাকসেনাদের দোসর আব্দুর রউফের ছেলে শামীম আহমদের নেতৃত্বে থাকা একদল ভূমিখেকো দানব চক্র।

 

২০১৫ সালে রাতের আঁধারে ব্যক্তি মালিকানাধীন নাম সর্বস্ব একটি কিন্ডারগার্টেনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন।

 

অভিযোগ রয়েছে, দখলবাজদের লক্ষ্য আপাতত কথিত ‘পাঠশালা’ পরবর্তীতে জমি বন্দোবস্থ পেলেই পর্যটন এলাকাখ্যাত ট্যাকেরঘাটের ওই জমিতে হোটেল মোটেল ‘আনন্দশালা’ তৈরী করে দু’হাতে টাকা কামানো ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নি মুছে ফেলা।

 

পরে জনসমাগম ও প্রশাসনের দৃষ্টি আড়াল করতে জনচলাচলের একমাত্র কাঁচা রাস্তাটিও বন্ধ করে দেয়া হয়।

 

আরও পড়ুন » ৭১’র মুক্তির মঞ্চসহ কয়েক কোটি টাকার সরকারি সম্পদ দখল!

 

এদিকে, গত ৪ ডিসেম্বর তাহিরপুর মুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় ডিসেম্বর উপজেলা সদের ইউএরও সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়ে দেন বিজয় দিবসের প্রারম্ভে স্বাধীনতা বিরোধী পরিবার ও রাজাকার সন্তান শামীম গংদের কবল হতে ‘মুক্তির মঞ্চ’ সহ সরকারি জমি উদ্ধার করা না হলে তারা প্রশাসনের আয়োজনে বিজয় দিবনের সবংর্ধণা করবেন।

 

এনিয়ে ৪ ও ৫ ডিসেম্বর বিভিন্ন জাতীয়, স্থানীয় আঞ্চলিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নজরে আসে সরকারের উপর মহল ও জেলা প্রশাসনের। ৫ ডিসেম্বর উপজেলার ট্যাকেরঘাটে ইউএনও সরজমিনে গেলে শতাধিক লোকজন ‘মুক্তির মঞ্চ’ সরকারি জায়গা দখলে নেয়ার ব্যাপারে প্রকাশ্যে স্বাক্ষ্য প্রদান করেন।

 

আরও পড়ুন » ‘মুক্তির মঞ্চ’ রাজাকার পুত্রের দখলে! বিজয় দিবসে সবংর্ধনা অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা

 

কিন্তু চতুর শামীম গংরা তাদের দখল বাণিজ্যের অন্যতম সহযোগী উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক স্বপন কুমার দাসকে নিয়ে তাদের দখল বাণিজ্য ঠিকিয়ে রাখতে নানা কৌশলে দখলীয় জায়গায় স্কুল রয়েছে এটি জেলা প্রশাসনকে বোঝাতে গিয়ে কিন্ডার গার্ডেনের ছবি, ভিডিও ক্লিপ খাতা-পত্র, ছোট ছোট গাছের চারা, বাগানের ছবি ডকুমেন্ট হিসাবে ইউএনওকে ধরিয়ে দেন।

 

এরপর এলাকার বেশ কিছু বীরমুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর স্বাক্ষর আদায়ে এমনকি কিন্ডার গার্ডেনের পুরাতন ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ফের কিন্ডার গার্ডেনে নিয়ে এসে ফটোসেশনও করেন দখল রক্ষায়।

 

তাতেও দখল বাণিজ্য আপাতত ঝুঁকিমুক্ত বা নিরাপদ নয় ভেবে রোববার (০৮ ডিসেম্বর) হতে ট্যাকেরঘাটে শামীম-স্বপন গংরা উচ্ছেদ অভিযানে প্রশাসনের মুখোমুখি সাধারন লোকজনকে দাঁড়করাতে পুরনো কায়দায় লোকজনের মধ্যে গুজব রটনা করে যাচ্ছেন বাসা-বাড়ি থেকেও সব লোকজনকে উচ্ছেদ করা হবে বলে।

 

সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার আলকাছ উদ্দিন, বড়দল উত্তর ইউনিয়ন কমান্ডার নুর মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সাবেক থানা কমান্ডার রৌজ আলীসহ আমাদেরকে সোমবার বেলা ১টার দিকে তাহিরপুরের ইউএনও বিজেন ব্যানার্জী তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে বৈঠকে বসেন।

 

ওই বৈঠকে গুটিকয়েক ছোট ছোট সুপারি, নারকেল গাছের চারা গাছ রক্ষায় ‘মুক্তির মঞ্চ’সহ সরকারি জায়গায় জনসাধারনের জন্য পুর্বের থাকা উন্মুক্ত সমাবেশস্থল মাঠটি টিনশেডের বেষ্টনি বহাল রাখায় ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের সম্মতি আদায়ে চেষ্টা করেন।

 

এ টিনের বেষ্টনি অপসারণ করা না হলে উচ্ছেদ অভিযান হলেও এটি হবে আইওয়াশ ও পরবর্তীতে দখলবাজরা তাদের দখল রক্ষায় আদালতমুখী হবার পথ দেথানোর শামিল বলে গণ্যহবে, দৃম্যমান উচ্ছেদ অভিযান না হলে পুরো জেলা প্রশাসনই হবেন প্রশ্নবিদ্ধ, কাজেই আমরা এমন উদ্ভট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ইউএনওকে সন্ধ্যায় জানিয়ে দিয়েছি, উচ্ছেদ অভিযানে কোন বেষ্টনি থাকবে না, সমাবেশ স্থল মাঠ ও ‘মুক্তির মঞ্চ’ উন্মুক্ত করে সরকারি জমিতে ভবনসহ পুরো দখলীয় জমিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

 

তারা আরো বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হবে, এর কোন রকম ব্যর্থ হলে আমরা বিজয় দিবসে উপজেলা প্রশাসনের সবংর্ধনা বর্জনের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে মানববন্ধনসহ নানা যৌক্তিক আন্দোলন কর্মসুচীর ডাক দেব।

 

তাহিরপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) মো. মুনতাসির হাসান সোমবার রাতে গণমাধ্যমকে জানান, জাতীর বীরসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের দাবির আলোকে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে টেকেরঘাটে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ‘মুক্তির মঞ্চ’ সরকারি জমিতে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com