সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ৯, ২০২২
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আগুন জ্বালিয়ে ও ধোঁয়া উড়িয়ে শুটিং করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বনের প্রাণীদের পাশাপাশি ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। শুটিং ইউনিটের মানুষের ছুটাছুটিতে নষ্ট হচ্ছে বনতল।
বুধবার (৮ জুন) একটি বহুজাতিক কোম্পানি তাদের এনার্জি ড্রিংকস’র বিজ্ঞাপনের শুটিং করতে যায়। তাদের সাথে ছিল প্রায় ১০০ জন মানুষ, ৮টি প্রাইভেটকার, ২টি জেনারেটর, ২টি ছোট পিকআপ। এসব নিয়েই তারা বনের অভ্যন্তরে ঢুকে। এ জন্য তারা কোনো লিখিত অনুমতি নেয়নি। মৌখিক অনুমতিতেই শুটিংয়ের কাজ করছেন তারা।
সরেজমিনে লাউয়াছড়া গিয়ে দেখা যায়, সংরক্ষিত বনের মধ্য ভাগে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শুটিং চলছে। ছড়ার পাড়ে তাঁবু টাঙ্গিয়ে বসে আছেন প্রডাকশন ও মেশিনম্যানরা। পাশেই একটি পিকআপে চালু আছে ৩৫ কিলো ওয়াটের জেনারেটর। এই জেনারেটরের শব্দ শোনা যাচ্ছে শুটিং এলাকা থেকে আরও প্রায় ২ কিলোমিটার দূর থেকে। ছড়ায় নেমে শুটিং করছেন মডেল। তার সাথে আছেন প্রায় ৩০/৪০ জন মানুষ। ছড়ার পাড়ে তিনটি টিনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে ধোঁয়া। আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে বনের শুটিং এলাকা।
এছাড়াও জ্বালানো হয়েছে লাইট। শুটিংয়ের মানুষের ছুটাছুটি করছেন বনের গহীনে, ছড়া ও ছড়ার পাড়ে। মানুষের পদতলে পৃষ্ট হচ্ছে বনের তৃণ লতাগুল্ম। ভেঙ্গে পরে আছে অনেক ছোট ছোট গাছের চারা। বনের ভেতরই সিলিন্ডারে আগুন জ্বালিয়ে রান্না হচ্ছে শুটিং ইউনিটের দুপুরের খাবার। রয়েছে চা পানের ব্যবস্থা। বিভিন্ন কাজে শুটিং ইউনিটকে সাহায্য করছেন বনকর্মী ও সিপিজি সদস্যরা।
সকাল থেকেই এই বনে গবেষণা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বন্যপ্রাণী ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষক বিভাগের শিক্ষার্থী শিমুল নাথ। বনের ভেতর এভাবে শুটিং করতে দেখে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, লাউয়াছড়া বনে কোনোভাবেই শুটিং করতে দেয়া উচিত নয়। প্রাণীরা বনের নির্দিষ্ট কোনো স্থানে নয়, পুরো বনে ঘুরে বেড়ায়। আর এখন বর্ষা মৌসুম, বনের অনেক প্রাণীর বাচ্চা দেয়ার সময়। শুটিংয়ের কারণে প্রাণী ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।
শুটিং ইউনিটের লাইটম্যান আলমগীর জানান, বনে ১ হাজার ওয়াটের ২৭টি বাল্ব জ্বালানো হয়েছে। আর ছড়ায় ৩০০ ওয়াটের একটি জেনারেটর। আলো না জ্বালালে তো অন্ধকারে শুটিং করা যাবে না। শুটিং ইউনিটের লাইন ডিরেক্টর এমবিএ রন্টু বলেন, ‘আমরা মৌখিক অনুমতি নিয়ে শুটিং শুরু করেছি। বনবিভাগ আমাদের শুটিং করার নিয়ম বলে দেয়নি। এভাবে আগেও আমরা শুটিং করেছি।’
লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া উড়ানো, জেনারেটরের শব্দ, লাইট জ্বালানো- সবকিছুই বন ও প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। এককথায় লাউয়াছড়ায় শুটিং করাই উচিত নয়।’ প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘বনবিভাগের এটা করা উচিত হয়নি। মাত্র ৩ দিন আগে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণের কথা বলেছেন। আর তিন দিন পরই কী করে বনবিভাগ এই কাজ করতে পারল। এটা তাদের সারাজীবনের জন্য কলঙ্ক লেগে গেল। জনগণের টাকায় যাদের বেতন হয়, তারা কিভাবে আজকে লাউয়াছড়ার মত এক পাবলিক বন নিয়ে এমন করতে পারলেন?’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগ সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাকে জানিয়ে বনে প্রবেশের দরকার নেই। রেভিনিউ জমা দিয়ে শুটিং করার নিয়ম আছে। তবে, আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া দেয়া বা লাইট জ্বালানোর নিয়ম নেই। এটা তারা করতে পারে না। এতে বন ও বনের প্রাণীর ক্ষতি হবে।’
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো: কামরুল হাসান
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি