লোভাছড়া কোয়ারীতে চলছে ধ্বংসলীলা! জানেন না ইউএনও

প্রকাশিত: ৮:৩৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০১৯

লোভাছড়া কোয়ারীতে চলছে ধ্বংসলীলা! জানেন না ইউএনও

সিলেটের কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে খেকোদের তাণ্ডবের দৃশ্য।

 

মুমিন রশিদ, কানাইঘাট : সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে সরকারি লীজ ব্যতিত অবৈধ ভাবে যান্ত্রিক ফেলডার, এক্সেভেটর দিয়ে গভীর গর্ত করে পাথর উত্তোলনের ধ্বংস লীলা চললেও এ ক্ষেত্রে নিরব রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। প্রায় ৩ সপ্তাহ ধরে কোয়ারীতে ধ্বংস লীলা চললেও পাথর খেকোদের তান্ডব বন্ধে কোয়ারীতে স্থানীয় প্রশাসনের অভিযান হয় কিনা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ বারিউল করিম খান।

 

শনিবার (২১ ডিসেম্বর) নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খানের সাথে কোয়ারী থেকে অবৈধভাবে যান্ত্রিক বাহন দিয়ে তান্ডব চালিয়ে গভীর গর্ত করে নদীর পাড় ভেঙ্গে যারা পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে এসব বাহন ও জড়িতদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত কোন ধরনের অভিযান হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোয়ারীতে স্থানীয় প্রশাসন অভিযান করে কিনা আমার জানা নেই। পূর্বে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের অভিযান হয়েছে কিনা এ ব্যাপারেও আমি কিছুই জানি না।

 

কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলনের কোন সরকারি অনুমতি ও নির্দেশনা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারেও আমার কিছু জানা নেই। তবে খনিজ সম্পদ ব্যুরোকে চিঠি দিয়ে পাথর উত্তোলনের বিষয়ে তিনি জেনে নিবেন বলে জানান।

 

এদিকে, সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন অদ্যাবধি পর্যন্ত লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে পরিবেশ বিরোধী কোন ধরনের তৎপরতা প্রশাসনের পক্ষ থেকে না হওয়ায় কোয়ারীতে রীতিমতো তান্ডব লীলা শুরু হয়েছে। প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের নাম ভাঙ্গিয়ে ইতিমধ্যে কোয়ারীর নিয়ন্ত্রণকারীরা পাথর উত্তোলনের সাথে জড়িত ব্যবসায়ী, পাথর উত্তোলনের অসংখ্য এক্সেভেটর, পে-লোডার, সেইভ মেশিন এবং পাথর পরিবহনের কাজে জড়িত শত শত ট্রাক, ট্রাক্টর থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজী শুরু করেছে।

 

জানা যায়, সিলেট জেলার সব কয়টি পাথর কোয়ারীর লীজ সরকারি ভাবে বন্ধ রয়েছে। গত বছর লোভাছড়া পাথর শ্রমিক সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দের একটি রিটের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ শুধুমাত্র পাথর শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য নানা শর্ত দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেন। কিন্তু সেই রিটকে পুঁজি করে সরকারি কোন ধরনের পাথর উত্তোলনের নির্দেশনা ছাড়াই কোয়ারীর নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবশালী চক্র পাথর উত্তোলনের প্রতিটি গর্ত থেকে ৩/৪ লক্ষ টাকা ও প্রতিটি পে-লোডার ও এক্সেভেটর থেকে মাসিক হারে ৩০/৩৫ হাজার টাকা, পাথর উত্তোলনের সেইভ মেশিন থেকে ৮০০/১০০০ টাকা এবং পাথর পরিবহনের শত শত ট্রাক ট্রাক্টর থেকে ট্রিপ প্রতি ২শ’ টাকা করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

 

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিলেটের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহল, স্থানীয় প্রশাসন, সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার জন্য নামে-বেনামে বেপরোয়া চাঁদাবাজী চলছে কোয়ারীতে। স্থানীয় প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় অসন্তুষ্ট সচেতন মহল। গত কয়েক বছরধরে কোয়ারী থেকে পাথর উত্তোলনের ক্ষেত্রে পরিবেশ বিরোধী তৎপরতা বন্ধে সব সময় স্থানীয় ইউএনও ও এসিল্যান্ডের মাধ্যমে কোয়ারীতে নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি অনেক সময় টাস্কফোর্সের অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। গত বছর বিদায়ী ইউএনও তানিয়া সুলতানার নেতৃত্বে কোয়ারীতে পাথর উত্তোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অভিযান হয়েছিল সেখানে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করাও হয়েছিল। অনেক পে-লোডার, এক্সেভেটর, সেলো মেশিন, সেইভ মেশিন, বারকী নৌকা ও পাথর উত্তোলনের যন্ত্রপাতি ধ্বংস ও জব্দ এবং আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ ও বার বার কোয়ারীর সাথে সংশ্লিষ্ট পাথর ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের নিয়ে বৈঠকও করেছিলেন বিদায়ী ইউএনও তানিয়া সুলতানা।

 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বারিউল করিম খান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ৩ সপ্তাহ ধরে কোয়ারীতে পরিবেশ বিরোধী তান্ডব লীলা চললেও অদ্যাবধি পর্যন্ত এ ব্যাপারে তিনি কোন ধরনের অভিযান পরিচালনা করেননি। যার কারনে কোয়ারীতে এবার ব্যাপক ধ্বংস লীলা চলবে বলে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন। এতে করে প্রাণহানির সম্ভাবনা রয়েছে। গত কয়েক বছরে কোয়ারীতে পাথরের গর্ত ধ্বসে পড়ে বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছিল।

 

প্রসঙ্গত, গত বছর কোয়ারীতে পরিবেশ বিরোধী তৎপরতার ঘটনায় প্রায় অর্ধ শতাধিক পাথর ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের একজন কর্মকর্তা কানাইঘাট থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

রাফি গার্ডেন সুপার হোস্টেল।

 

আমাদের ভিজিটর
Flag Counter

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com