সিলেটে পৌছেঁছেন জাফর ইকবাল : যা বললেন হামলাকারীদের উদ্দেশ্যে

প্রকাশিত: ২:৩৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৪, ২০১৮

সিলেটে পৌছেঁছেন জাফর ইকবাল : যা বললেন হামলাকারীদের উদ্দেশ্যে

উগ্রপন্থি ফয়জুল হাসানের ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে সিলেটে ফিরেছেন জনপ্রিয় লেখক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল।

বুধবার (১৪ মার্চ) বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটের সময় তিনি বিমানযোগে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। ১১ দিনের চিকিৎসা শেষে আজ তিনি ছাড়া পেয়েছেন হাসপাতাল থেকে।

হাসপাতাল ছেড়েই শিক্ষার্থী অন্ত:প্রাণ মানুষটি ছুটে আসেন সিলেটে তার ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে।

এসময় তাকে স্বাগত জানান- বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদ। এছাড়া তার সাথে ঢাকা থেকে আসেন তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক। বিমানবন্দর থেকে কড়া নিরাপত্তায় তিনি সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান। সেখানে বিকেলে মুক্তমঞ্চে সংবর্ধনায় যোগ দেন তিনি।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় জাফর ইকবালের চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত সামরিকবাহিনীর কর্মকর্তারা তাকে সিএমএইচে বিদায় জানান। তাকে আগামী সাত দিনের জন্য সম্পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জাফর ইকবালের সঙ্গে তার স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হকসহ পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন।

এদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে বিমানে উঠার সময় গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা হয় প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ জাফর ইকবালের।

তিনি জানান, উগ্রপন্থায় দীক্ষিত হয়ে যারা হামলা করেছে, তাদের ওপর কোনো রাগ পুষে রাখছেন না বরং তাদের প্রতি করুণা হয় তার। এটা ভেবে দু:খ পান, পৃথিবীতে কত ভালো ভালো কাজ করার আছে, সেটা বাদ দিয়ে তারা এমন একটা কাজে নেমেছে, যেটা কোনা কল্যাণ বয়ে আনে না।

জাফর ইকবাল জানান, তিনি ভালো আছেন। সেই কথাটি তিনি সিলেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদেরকে একথা বলবেন।

হামলাকরীকে উদ্দেশ্য করে বরেণ্য এই শিক্ষক বলেন, তাদের (হামলাকারী) জন্য আমার কোনো রাগ নেই। তাদের জন্য আমি এক ধরনের দু:খ অনুভব করি। এত সুন্দর পৃথিবী, সেখানে এত সুন্দর সুন্দর কাজ করা সম্ভব, কিন্তু তারা সেগুলো না করে, এই ধরনের একটি কাজকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে নিয়েছে এ জন্যই তাদের জন্য দু:খবোধ করি।

জাফর ইকবাল বলেন, আমাদের বাংলাদেশটাকে এভাবে গড়ে তুলতে হবে এই ধরনের মানুষ যেন জন্ম না নেয়, বা তারা এই ধরনের পথে যেন না যায়। তারা যেন সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারে সাধারণ মানুষের মতো, এটাই আশা করি।

প্রসঙ্গত, গত ৩ মার্চ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে ছুরি নিয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালায় মাদ্রাসা ছাত্র ফয়জুল। হামলায় গুরুতর আহত হলে তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়।

পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ওইদিনই হেলিকপ্টার যোগে ঢাকা সিএমইচে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয় এবং তার চিকিৎসা কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

হামলার পরপরই পালিয়ে জাবার সময় ফয়জুলকে ধরে পিটুনি দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। প্রথমে রাগীব রাবেয়া মেডিকেল ও পরে সিলেটের জালালাবাদ সিএমএইচে চিকিৎসা দেওয়ার পর ফয়জুলকে পুলিশে সোপর্দ করে র‌্যাব। পরে পুলিশ তাকে ভর্তি করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় ফয়জুলসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে গত ৪ মার্চ সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা দায়ের করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

হামলার দিন রাতেই ফয়জুলের মামাকে টুকেরবাজারের শেখপাড়া থেকে ও ৪ মার্চ রাতে মদিনা মার্কেট এলাকা থেকে ফয়জুলের বাবা ও মাকে আটক আটক করে পুলিশ।

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com