সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৩:২৫ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০১৯
ভালো নেই সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি নারী শ্রমিকরা। অর্থকষ্ট দূর করে জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এই নারী শ্রমিকরা বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে যাওয়া নারী শ্রমিকদের দিন কাটছে শত দুঃখ-কষ্টে।
বাসাবাড়িতে কাজ নিয়ে যাওয়া এই নারী শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কেউ বা হচ্ছেন যৌন হয়রানির শিকার। নির্যাতনে মারা গেছেন একাধিকজন। নাজমা নামে এক নারী শ্রমিকের লাশ তো প্রায় সাত মাস ধরে সৌদি আরবের একটি হাসপাতালের মর্গে পড়ে আছে। আবার নির্যাতনের শিকার নারী শ্রমিকরা দেশে ফিরে আসতে চাইলেও ফিরতে পারছেন না নানা সংকটের কারণে।
গত কয়েক দিনে সৌদি আরবে মক্কায় বাংলাদেশি শ্রমিক অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে অন্তত ৪ লাখ বাংলাদেশি নারী শ্রমিক রয়েছেন। যাদের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছর পর্যন্ত। এর মধ্যে নানারকম নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত দুই বছরের অন্তত ৮ হাজার নারী শ্রমিক বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন।
তবে দেশে ফেরত আসা শ্রমিকদের কোনো তথ্য বা ডাটাবেজ সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার কাছেই নেই বলে জানা গেছে। সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশ নারী শ্রমিকদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা তাদের করুণ অবস্থার কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে।
তারা বলেছেন, সংসারের অভাব দূর করতে এই বিদেশে এসে তারা এখন প্রতিনিয়ত শারীরিক, মানসিক, দৈহিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতনের শিকার। কেউ কেউ যৌন হয়রানিরও শিকার হয়েছেন। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার কুমিরা এলাকার সুলতানা (২৪)। বাবা নেই। চার বছর আগে বিয়ে হয়। পরে সংসারের অভাব-অনটন দূর করে সচ্ছলতা আনতে প্রায় ছয় মাস আগে সৌদি আরবে পা বাড়ান।
তিনি বলেন, এখানে আসার পর কমপক্ষে আটবার আমাকে বেচাকেনা ও হাতবদল করা হয়েছে। ঢাকা থেকে রিয়াদে পৌঁছানোর পর গভীর রাতে পথ বদল, মানুষ বদল, গাড়ি বদল করে সাত দিন পর আমাকে মরুভূমির মতো একটি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ১২ কক্ষের ওই বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর প্রথম কয়েক দিন তেমন কাজ করতে হয়নি। প্রতিদিন সকাল হলেই একজন আরব নারী ঘরে তালাবদ্ধ রেখে বাইরে চলে যেতেন।
এভাবে সপ্তাহ না ঘুরতেই শুরু হয় আমার ওপর যৌন নির্যাতন। তখন আমি বুঝতে পারি আমাকে অবৈধ কাজের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই তার ওপর চালানো মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন।
তিনি আরও জানান, তার মতো ঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, কুমিল্লা, ফরিদপুর, রংপুর, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকজন নারী একই ধরনের নির্যাতন ও প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। সুমি আক্তার (২৬) নামে আরেক যুবতী জানান, সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে তার মতো অনেক বাংলাদেশি নারীকে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের হাতে পাচার হওয়া এ রকম একজন বাংলাদেশি যুবতীর দাম ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা।
এই নারীর বেশির ভাগ দালালের হাত ধরে বিভিন্ন জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশে পাড়ি দেন। এর আগে তাদের দালালের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। বলা হয়, হাসপাতালের আয়ার ভিসা আছে। বেতন ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। গেলে ২ লাখ টাকা লাগবে। সব শুনে যুবতীরা রাজি হন। এরপর ওই নারীদের প্রথমে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে কিছু আরবি শব্দ শিখিয়ে সনদ দেওয়া হয়।
ওই সনদ ও পাসপোর্ট দিয়ে ভিসা করানো হয়। এরপর তাকে তিন দফায় বিমানবন্দর নেওয়া হয়। এরপর রিয়াদে পৌঁছালে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় গারদঘরে। সেখানে অনেক বাংলাদেশি নারীকে দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে সৌদি নারীরা এসে পছন্দের যুবতীদের বের করে নিয়ে যান। পরে টাকার বিনিময়ে হাতবদল হয়। এরপর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাওয়া বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের নিয়ে ঢাকায় কাজ করছে বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র (বিএনএসকে)।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুমাইয়া ইসলাম গতকাল বলেন, ‘বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ৮ লাখ ৬৬ হাজার বাংলাদেশি নারী শ্রমিক কাজ করছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবেই আছেন ৪ লাখ; যার বেশির ভাগই গেরস্থালির কাজের জন্য সৌদি গেছেন। কিন্তু বিদেশে কর্মরত এই নারী শ্রমিকদের যে রকম প্রতিরক্ষা সাপোর্ট দেওয়া দরকার, অন জব ও জেন্ডারভিত্তিক ভায়োলেন্স সাপোর্ট দরকার সেগুলো তারা পাচ্ছেন না।
এখনো সে রকম অবস্থা তৈরি করা যায়নি। ফলে সৌদিতে কর্মরত নারীরা যে নির্যাতন, হযরানি ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন সে বিষয়ে তারা প্রতিকার পেতে কার কাছে যাবেন তা জানেন না।’ তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় “দূতাবাস” নামে একটা মোবাইল অ্যাপস চালু করেছে। কিন্তু সেটি এখনো ওই রকম ব্যাপকতা পায়নি। তার পরও এই অ্যাপসে কিছু কিছু নারী তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরছেন।
এটিকে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে প্রতিটি দেশে, যেখানে বাংলাদেশি নারী শ্রমিক আছেন। তাহলে হয়তো এই নারী শ্রমিকরা তাদের নির্যাতনের কথা জানাতে পারবেন এবং প্রতিকারও পাবেন।’ অ্যাডভোকেট সুমাইয়া জানান, তাদের প্রতিষ্ঠান বিএনএসকেও চেষ্টা করছে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করার। খুব শিগগির এটি চালু করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও জানান, সৌদি আরবের রিয়াদে নির্যাতনের শিকার হয়ে নাজমা নামে এক গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাত মাস আগে। স্থানীয় প্রশাসন তার ময়নাতদন্তও করেছে। কিন্তু তার লাশ আজ পর্যন্ত দেশে আনা যায়নি। সাত মাস ধরেই মর্গে পড়ে আছে। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে সৌদিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস নাজমার বোন সালমাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, নাজমার মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিতে দূতাবাসের পক্ষ থেকে তার লাশের পুনঃ ময়নাতদন্ত করা হবে।
সুমাইয়া জানান, তারা আশা করছেন দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত শেষে শিগগিরই নাজমার লাশ দেশে আনা সম্ভব হবে। নাজমার বাসা রাজধানীর যাত্রাবাড়ী। তিনি রিয়াদে যে বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে ছিলেন সেখানে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পালিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাকে ধরে আবারও ওই বাসায় পৌঁছে দিলে বাসার লোকজন তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সুমাইয়ার মতে সৌদি আরবে কর্মরত নারী শ্রমিকদের সব ধরনের সাপোর্ট দিলে নির্যাতনের ঘটনা কমে আসবে। মৃত্যুঝুঁকিও থাকবে না। এদিকে সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার নারী শ্রমিকদের বিষয়ে শেখ আমজাদ আলী নামে সৌদি আরবের রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক জানান, বাংলাদেশি নারীদের সব অভিযোগ সঠিক নয়। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে সৌদি আরব সরকার।
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো: কামরুল হাসান
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি