অপুষ্টিতে ভুগছে সুনামগঞ্জের ৫২ শতাংশ শিশু

প্রকাশিত: ২:০৩ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০২১

অপুষ্টিতে ভুগছে সুনামগঞ্জের ৫২ শতাংশ শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ :
হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ প্রাকৃতিকভাবে সমৃদ্ধ হলেও দারিদ্র্যের হার তুলনামূলক বেশি হওয়ায় অপুষ্টিতে ভুগছে অধিকাংশ শিশু।

 

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসের সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, জেলায় ৫২ শতাংশ শিশু অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত। এ হারকে স্বাস্থ্য বিভাগ উচ্চতর সমস্যা বললেও পর্যাপ্ত জনবল সংকটে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের।

 

অভাব-অনটনের কারণে শিশুদের জন্য আলাদা করে পুষ্টিকর খাবার জোগাড়ে ব্যর্থতা এবং সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ার আক্ষেপ প্রকাশ করছেন অভিভাবকরা।

 

সুনামগঞ্জ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, জেলায় বর্তমান খর্বাকার রোগে ভুগছে ৫২ শতাংশ শিশু, ক্ষীণকার ১৫ শতাংশ, কম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়া শিশুর সংখ্যা ২৬ শতাংশ এবং নিরাপদ মায়ের বুকের দুধের অভাবে ভুগছে ৫৫ শতাংশ শিশু।

 

অর্থ ও সচেতনতার অভাবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরাই বেশি অপুষ্টিতে ভুগছে। সুনামগঞ্জের শাল্লা, মধ্যনগর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার শিশুরা তুলনামূলকভাবে বেশি অপুষ্টির শিকার।

 

দোয়ারাবাজার ও শাল্লা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, শহরের শিশুদের তুলনায় প্রত্যন্ত এলাকার শিশুরা রোগা ও বেটে। এসব গ্রামের মানুষের ‘দিন আনি দিন খাই’ অবস্থা হওয়ায় আলাদাভাবে শিশুর বিকাশের দিকে মনোযোগ নেই অভিভাবকদের।

 

সুনামগঞ্জ ধান ও মাছের জন্য বিখ্যাত হলেও শাকসবজির ফলন কম। হাওরে জেলেদের জালে ছোট-বড় দেশি পুষ্টিকর মাছ উঠলেও সেই মাছ সন্তানদের না খাইয়ে বাজারে বিক্রি করে বাড়িতে নিয়ে যান পাঙাশ মাছ।

 

এ অঞ্চলের মানুষের অভিযোগ, সরকারিভাবে শিশুদের টিকাদান ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো ছাড়া আর কোনো কার্যক্রম নেই।

 

শাল্লা উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের আছিয়া বেগম বলেন, আমার চার সন্তানের সবাই বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকে। ডাক্তার দেখাই কিন্তু ভালা কিচ্ছু কিনিয়া বাচ্চাগুনতে মুখও দেয়ার মুরদ নাই আমরার, আলু আর পাঙাশ মাছ ইটা দিয়াই চলরাম আমরা। যেদিন তাইনের একটু ভালা ইনকাম হয়, তে একদিন মাংস খাইলায়। কিন্তু বাজারও যে জিনিসের দাম বাড়ছে এখন তিনবেলা কোনো রকম খাইয়া বাছিয়া আছি।

 

একই গ্রামের কৃষক জয়ন্ত দাস বলেন, ছেলেমেয়েরে কিতা খাওয়াইতাম বাজারও যে জিনিসের দাম আগুন, এখন ধান লাগানিত গেলেও টাকা লাগব বেশি, আমরা কিতা করতাম, যা নিজে খাই তাই ছেলেরারে খাওয়াই, সরকার যদি আমরারে একটু দেখে তাইলে ভালা অইতো।

 

দোয়ারাবাজারের আমবাড়ী এলাকার শিল্পী বেগম বলেন, বাজারও নতুন নতুন সবজি আইছে, কিন্তু যে আগুন দাম ইতা কিনিয়া আনিয়া খাওয়ানি যাইত না। স্বাস্থ্যকর্মীরা আয় তারা টিকা আর ভিটামিন ট্যাবলেট দেয়, ইটাই শেষ আর কিচ্ছু করে না। যা কইবার মুখে কয়, কিন্তু গরিবের কথা শুনিয়া লাভ নাই, যদি পারে সাহায্য করতে পারে।

 

বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) সুনামগঞ্জের সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা হাওর এলাকার কৃষক-জেলে থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষকে ফসল ও শাকসবজি উৎপাদন এবং এসবের ভিটামিন সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছি। তারা প্রশিক্ষণ অনুযায়ী জীবনযাপন করলে পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট ফসল বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন।

 

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, হাওরের প্রান্তিক পর্যায়ের শিশুরাই পুষ্টিহীনতায় বেশি ভুগছে, তাদের তুলনায় শহরকেন্দ্রিক বসবাস করা শিশুরা ভালো আছে।

 

হাওরের মায়েদেরও কিছুটা দায়সারা ভাব রয়েছে। এমনও দেখা যায়, পুষ্টিকর মাছ ধরে বিক্রি করে তারা চাল, ডাল, আলু আর পাঙাশ মাছ নিয়ে যাচ্ছেন। এখানে সব মানুষের খাবারে বৈচিত্র্যের অভাব রয়েছে। এক জরিপে দেখা গেছে, সুনামগঞ্জের ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ পরিবার দৈনিক ব্যবহারের জন্য শুধু প্রধান খাদ্য কেনে।

 

তিনি আরও বলেন, আমাদের কিছু করার নেই, এখানে আমি একাই কাজ করি। বাকি পদগুলো শূন্য রয়েছে। একা সবদিক কীভাবে দেখব। তবে প্রায় সময়ই নিয়োগের জন্য বলি, ফল হয় না।

 

সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, জেলার প্রতিটি ওয়ার্ডেই পুষ্টিবিষয়ক কার্যক্রম চালু আছে। মা সমাবেশসহ নানা প্রচারণা চালানো হয়। তবে আলাদাভাবে আমাদের হাতে কোনো প্রকল্প নেই।


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

রাফি গার্ডেন সুপার হোস্টেল।

 

আমাদের ভিজিটর
Flag Counter

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com