সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:০০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২১, ২০২১
সুরমা মেইল ডেস্ক :
অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাংলাদেশি নাগরিকদের রাখা হতো কলকাতার টর্চার সেলে। মুক্তিপণ নিতে সেখান থেকে তাদের নির্যাতনের ভিডিও ও অডিও রেকর্ড করে পাঠানো হতো ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে।
মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব–৪ এ কথা জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে পাচারের শিকার দুই ব্যক্তিকে হাজিরও করেছিল তারা। র্যাব জানিয়েছে, ভুক্তভোগীদের পাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তারা তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- মল্লিক রেজাউল হক সেলিম (৬২), বুলবুল আহমেদ মল্লিক (৫৫) ও নিরঞ্জন পাল (৫১)। তিনজনই একসময় অভিবাসী শ্রমিক ছিলেন।
র্যাব–৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোজাম্মেল হক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাংলাদেশে মানব পাচারকারী এই চক্রের আরো ৮ থেকে ১০ জন সদস্য আছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ভারতে থাকা তাদের আরো তিনজন সহযোগীর নাম জানিয়েছেন। সহযোগীরা হলেন- রাজীব খান, মানিক ও দিল্লির রবিন সিং। তিন–চার বছর ধরে চক্রটি মানব পাচারে জড়িত।
র্যাব জানায়, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক হিসেবে যেতে ইচ্ছুক এমন ব্যক্তিদের নিশানা করত এই চক্রটি। তাদের খপ্পরে পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে ফেনী, কুমিল্লা, নবাবগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মানুষ রয়েছেন। চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ড, রোমানিয়া, গ্রিস, ফ্রান্স ও মাল্টায় বেশি বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখাত। তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করত। কিন্তু প্রতিশ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার বদলে তাদের নিয়ে যাওয়া হতো কলকাতায়। সেখানে ভুক্তভোগীদের নির্যাতন করে অডিও ও ভিডিও দেশে পাঠিয়ে চক্রের সদস্যরা টাকা আদায় করতেন।
সম্প্রতি ভারত থেকে ফিরেছেন এমন একজন ভুক্তভোগী মো জাহাঙ্গীর। তিনি র্যাব–৪ এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ২০১৯ সালে জাহাঙ্গীর চক্রের সদস্য মল্লিক রেজাউল হক সেলিম ও বুলবুল আহমেদ মল্লিকের খবর পান। তারা মো. জাহাঙ্গীরকে অস্ট্রেলিয়া ও তার ভাগনে আকাশকে নেদারল্যান্ডে পাঠানোর কথা বলে ৩৪ লাখ টাকা দাবি করেন। ওই বছরের ১০ অক্টোবর মামা–ভাগনে দুই দফায় ১৪ লাখ টাকা দেন। নকল ভিসা দেখিয়ে পরে এই দলটি তাদের ভারতে পাচার করে দেয়। কলকাতার টর্চার সেলে আটকে রেখে তারা তাদের বেদম মারধর করে। সাড়ে ৯ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে পরে তারা দেশে ফেরেন।
পাচারকারী চক্রের অপর সদস্য নিরঞ্জন পাল পতুর্গাল ও মাল্টা পাঠানোর নাম করে বিল্লাল হোসেন, রবিন হোসেন ও শাহিন খানকে ভারতে পাচার করেন। টর্চার সেলে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ছয় মাস পর তারা ফিরে আসেন।
অভিযুক্ত তিনজনই একসময় অভিবাসী শ্রমিক ছিলেন
র্যাব জানিয়েছে, নবাবগঞ্জের মল্লিক রেজাউল হক ১৯৮৩ সালে এসএসসি পাস করে সৌদি আরবে যান। তিন বছর পর দেশে ফিরে তৈরি পোশাক ও মানব পাচারে যুক্ত হন। র্যাব জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছে ১৯৯২ সালে রেজাউল আবার দুবাইতে যান। সেখানেই তিনি মূলত ভারতের মানব পাচারকারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। ২০১০ সালে দেশে ফেরার পর কক্সবাজারে মাছের ব্যবসার আড়ালে মানব পাচার করতে শুরু করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে আগেও মানব পাচারের মামলা ছিল। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিপুল সম্পত্তি তার। আছেন দুই স্ত্রী ও ছয় সন্তান।
বুলবুল আহমেদ মল্লিকের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ। তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় কারখানা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে প্রথমে আমদানি–রফতানি ও পরে মানব পাচারে যুক্ত হন। পল্লবীর পলাশনহরে তার সাততলা একটি বাড়ি, উত্তরা, মিরপুর ও হাজীপুরে ফ্ল্যাট, প্লট ও জমিজমা আছে। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ২৪টি মামলা আছে।
নিরঞ্জন পালের বাড়িও নবাবগঞ্জ। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর রোমানিয়ায় যান। ১৯৯৮ সালে দেশে ফিরে গার্মেন্টস পণ্য ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৭ সালে এ দেশে থাকা সব সহায়সম্পত্তি বিক্রি করে তিনি ভারতে চলে যান। কলকাতার টর্চার সেলগুলো মূলত তিনিই চালান।
ভুক্তভোগীরা বলেন, টর্চার সেল পরিচালনাকারীদের সঙ্গে নিরঞ্জন নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। বাংলাদেশ ও ভারতে নিয়মিত যাতায়াত করেন নিরঞ্জন। কলকাতায় তাঁর অনেক বিষয়সম্পত্তি রয়েছে বলেও জানিয়েছে র্যাব।
উপদেষ্টা খালেদুল ইসলাম কোহিনুর
আইন বিষয়ক উপদেষ্টাঃ এড. মোঃ রফিক আহমদ
সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মোহাম্মদ হানিফ
সম্পাদক ও প্রকাশক : বীথি রানী কর
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : ফয়সাল আহমদ
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক : মো: কামরুল হাসান
নিউজ ইনচার্জ : সুনির্মল সেন
অফিস : রংমহল টাওয়ার (৪র্থ তলা),
বন্দর বাজার, সিলেট।
মোবাইল : ০১৭১৬-৯৭০৬৯৮
E-mail: surmamail1@gmail.com
Copyright-2015
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি