শাবি ভিসি, নারীবাদ, ফ্যাসিবাদ ও একটি কৌতুক

প্রকাশিত: ১১:৫৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২২

শাবি ভিসি, নারীবাদ, ফ্যাসিবাদ ও একটি কৌতুক

ইমতিয়াজ মাহমুদ :
প্রথমেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণবন্ত লড়াকু তরুণদের একটা স্যালুট জানিয়ে নিই। কেন ওদেরকে স্যালুট জানাচ্ছি? ওরা কি আন্দোলনে জয়যুক্ত হয়েছে? দেখেন, লড়াকু যোদ্ধাদেরকে স্যালুট জানাতেই হয়। যুদ্ধে ওরা জিতেছে কি হেরেছে সেটা আপনি আপনার নজরে নির্ধারণ করেন। আমি তো দেখি ওরা জয়যুক্ত হয়েছে। কীভাবে? ওরা তো ভিসির পতন ঘটিয়েছে। আমার নজরে, এবং আমি জানি আরও কোটি মানুষের নজরেও, ওই লোকটা তো পতিত হয়েছে। হয়নি? সেটা আপনার দেখবার নজর। এই কয়েকটা পুঁচকে ছেলেমেয়ে ওরা গোটা দেশের চোখের সামনে ওই লোকটাকে ফেলে দিয়েছে সম্মানের আসন থেকে।

 

না, ভিসির চেয়ারে সে হয়তো বসে আছে এখনো, থাকুক। নির্লজ্জ শেয়াল কোথায় বসে আছে সে কে খেয়াল করে! আমাদের বাচ্চারা তো কাঁপিয়ে দিয়েছে অরণ্য, বাঘ সিংহ সকলে নতজানু হয়ে এসেছে ওদের সম্মুখে। কেউ প্রকাশ্যে এসেছে, কেউ আড়ালে, এসেছে তো হাঁটু গেঁড়েই। ওইখানে ওদের বিজয় হয়ে গেছে। এরপরও ওইসব চালাকের দল যদি সেই খেঁকশেয়ালটাকেই পুষতে থাকে থাকুক। আমাদের কথা তো আমরা ছড়িয়ে দিয়েছি আসমান জুড়ে। আকাশের প্রতিটা তারা এখন জানে কে বিজয়ী যোদ্ধা আর কে ভীরু তস্কর। চেয়ার আঁকড়ে বসে থাকবে? থাকুক না তস্কর হাটের মধ্যিখানে, ওকে তো লোকে তস্করই বলবে- গদি আঁকড়ে ধরলেই কি তস্কর সূফি হয়ে যায়?

 

ছেলেমেয়েরা, তোমরা আমার স্যালুট কবুল কর। তোমরা সকলেই আমার কাছে এক এক কাপ করে চা পাওনা রইলে। চিয়ার্স। কিন্তু যে খণ্ড লড়াইটা তোমরা লড়লে, সেটা থেকে তোমরা কি নিয়ে ঘরে ফিরছ সেটা একটু হিসাব নিকাশ করারও প্রয়োজন আছে তোমাদের নিজেদের মধ্যে। এটা নিয়ে পরে একদিন লিখতেও পারি, যদি মনে থাকে। এখন কিনা আমি বই লিখছি তথা গ্রন্থ রচনা করছি।

 


বই লেখার ব্যাপারটা বেশ লাগছে। নারীবাদ প্রসঙ্গের বইটা আমি আগামী ৮ মার্চের আগেই আপনাদের হাতে তুলে দিতে চাই। তাইলে বইটা তো আমার এতদিনে শেষ করে প্রকাশকের কাছে তুলে দেওয়া দরকার ছিল। তবু একটু বাড়তি সময় নিচ্ছি। বইটা এগুচ্ছে, নিতান্ত খারাপ হচ্ছে না। আমার আলসেমি গতিতেই এগুচ্ছে, তবে হয়ে যাবে। বেশি বড় করতে চাচ্ছি না, কিন্তু নিতান্ত পকেট বই আকারেরও হবে না। চেষ্টা করছি একটা বই তৈরি করতে যেটা তরুণ বন্ধুদের জন্যে নারীবাদ বিষয়ক একটা প্রাথমিক পাঠ্য হিসাবে গৃহীত হতে পারে, আবার যেন অপাঠ্য ক্লাসের বইয়ের মতো খটখটে না হয়ে যায়। আমার দক্ষতা ক্ষমতা সীমিত, সেইটুকু নিয়েই চেষ্টা করছি।

 

এই বই নিয়ে আমার প্রত্যাশা হচ্ছে যে এটার পর তরুণ সিরিয়াস লেখকরা নারীবাদ বিষয়ক অনেকগুলি বই লিখতে আগ্রহী হবেন। বাংলা ভাষায় নারীবাদী সাহিত্যের একটা ধারা তৈরি হবে, আমাদের বইয়ের দোকানগুলিতে ওরা যে ইতিহাস অর্থনীতি উপন্যাস বাণিজ্য এইরকম নানারকম সব সেলফ চিহ্নিত করে রাখে, সেসবের সাথে নারীবাদ নামেও একটা সেলফ যুক্ত হবে। আর নারীবাদ প্রসঙ্গটা আমাদের সমাজে শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা যেভাবে হেলাফেলা করে, এমনকি রাজনীতিবিদরাও, সেটারও অবসান হওয়া দরকার। বইটা শেষ করে নিই, দেখা যাক এটাতে এই ধারার লেখালেখি উস্কে উঠে কিনা। নিজের লেখার ক্ষমতার উপর বেশি ভরসা পাচ্ছি না, তবুও আমি আমার কাজটা করে নিই।

 

একটা মুশকিল হয়েছে বইটা লিখতে গিয়ে। এখন আরও পড়তে ইচ্ছে করছে, পড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। পড়া হচ্ছেও কিছুটা। বই যতটুকু যেরকমই হোক, পড়াটা বেশ হচ্ছে। একটা ইন্টারেস্টিং কথা কি জানেন? পড়তে পড়তে আমার কেবল ছাত্র ইউনিয়নে আমার সক্রিয় দিনগুলির কথা মনে পড়ে। চেতনার জায়গাটায় তখনই সঠিক ছিলাম।

 


এইবার একটা হাস্যরসের কথা বলি। কৌতুক। নারীবাদ লিখছি তো, অল্প অল্প করে লিখি। বিরতি দিই, পেশাগত কাজ করি, আবার অল্প একটু লিখি। এর মাঝে নানা চিন্তা আসে। এরকম একটা চিন্তা হলো, নারীবাদ লেখা শেষ হলে তারপর তো অন্য একটা কিছু লিখতে হয়। কী লিখব? একবার ভাবলাম নারীবাদ শেষ হলে ফ্যাসিবাদ লিখব। যেই ভাবা সেই কাজ। ফ্যাসিজম বিষয়ক এক গাদা বই জোগাড় করে ফেললাম, ক্লারা জেটকিন আছে, ট্রটস্কি আছে, পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়ায় এরকম কিছু পাঠ্য ধরনের বই আছে- বেশ কয়েকটা বই। টেবিলে স্তূপ হয়ে যায়। কিছু বই আছে যেগুলো সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যই হচ্ছে হিটলার মুসোলিনিসহ ইতিহাসের অন্যান্য সব ফ্যাসিবাদী সময়ের প্রবণতা সম্পর্কে জানা। গত কয়েকদিন ধরে মনে হচ্ছে, আরেহ, এতো বই তো কেনার দরকার ছিল না।

 

লেখক : ইমতিয়াজ মাহমুদ, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com