শাবি শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে : শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ৯:৩৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২২

শাবি শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে : শিক্ষামন্ত্রী

সুরমা মেইল ডেস্ক :
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চলমান অচলাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কারো যদি কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি থাকে তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য যৌক্তিক সময় প্রয়োজন।

 

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সাড়ে ৬টায় রাজধানীর হেয়ার রোডে সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের কয়েক দফার আন্দোলন কিভাবে এক দফার আন্দোলনে পরিণত হল, তা আমরা খতিয়ে দেখবো।


।আরও পড়ুন


শিক্ষার্থীদের দাবিকে যৌক্তিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, টানা আন্দোলনে তারা বিপর্যস্ত হয়ে আছে। তারা একটু সুস্থ হয়ে উঠুক। কয়েকটা দিন পর সময় নিয়ে তারা যদি বসতে চান, তবে তাই হবে। এই আন্দোলন তো শিক্ষার্থীদের অভাব-অভিযোগের বহিঃপ্রকাশ। মূল সমস্যাটা আসলে কোথায়, সেটা আমরা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রশাসন, আমরা সবাই মিলে তা বের করবো।

 

ডা. দীপু মনি বলেন, আমাদের সন্তানেরা আর অনশন করবে না- এটি আমাদের জন্য স্বস্তির। তাদের অনশন ভাঙানোর জন্য আমি ড. জাফর ইকবালের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

 

উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ভিসির পদত্যাগ অন্য বিষয়। তাকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন। তিনি পদত্যাগ করলেই তো সমস্যার সমাধান হবে না। এক ভিসি যাবেন, আরেক ভিসি আসবেন। সমস্যার জায়গায় সমস্যা থেকে যাবে।

 

শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনাকে দুঃখজনক মন্তব্য করে দীপু মনি বলেন, এ হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বা যারাই দায়ী হোক, যাদেরই অবহেলা বা ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশের মামলার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আগে যা হয়ে গেছে, তা তো হয়েই গেছে। আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে কোনো ক্ষতি হোক সেটা আমরা চাই না। মামলার ফলে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না।

 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় হামলা ও গুলি চালানোর অভিযোগে পুলিশ যে মামলা দায়ের করেছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী।

 

শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত গত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ছাত্রীদের অভিযোগ, সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীরা কিছু সমস্যার কথা বলতে প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজাকে মোবাইল ফোনে কল করেন। এ সময় তিনি ছাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন। এর প্রতিবাদে ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে হলের সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে ছাত্রলীগ ছাত্রীদের আন্দোলনে হামলা চালায়।

 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেছেন, আবাসিক হলের পানি, সিট, ইন্টারনেট, খাবারসহ বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা হলের রিডিং রুমে আলোচনা করছিলেন। আলোচনার মাঝে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক জাফরিন আহমেদ লিজাকে ফোন দিয়ে অল্প সময়ের জন্য হলে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। প্রথমে তিনি অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যেতে চান। এরপর শিক্ষার্থীরা তাঁর কাছে প্রভোস্ট বডির কাউকে হলে পাঠানোর অনুরোধ জানালে জাফরিন আহমেদ লিজা ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘কেউ তো মরেনি যে তোমাদের দেখতে আসব। আমার এত ঠেকা পড়েনি। ইচ্ছে হলে থাক, নয় তো বেরিয়ে যেতে পারো!’

 

প্রভোস্টের এ মন্তব্যে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। তারা বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা সেখানে হামলা চালান। আন্দোলনরত ছাত্রীরা জানান, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসে কর্মসূচি গুটিয়ে তাদের চলে যেতে বলেন। এ সময় আন্দোলনকারী ছাত্রীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বাগ্বিতন্ডা হয়। এরই মধ্যে ছাত্রীদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে যাওয়া ১০-১২ জন শিক্ষার্থীকে সেখানে বেধড়ক মারধর করা হয়। হামলাকারীদের হাত থেকে তাদের বাঁচাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন আন্দোলনরত কয়েকজন ছাত্রী। ক্যাম্পাসের গোলচত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ এবং প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. আলমগীর কবিরের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে।

 

এ ঘটনার পর ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে ছাত্রীরা হামলার বিচার ও প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যেতে থাকেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে ১৫ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেন কর্তৃপক্ষ। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। এবার তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এরই মধ্যে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজা পদত্যাগ করলেও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে ১৯ জানুয়ারি বিকালে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ২৪ শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। পরে তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বাড়তে থাকে অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা।

 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা নিরসনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ২২ জানুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরদিন তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশ নেন। কিন্তু কোনো সমাধানে পৌঁছতে পারেননি।

 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা টানা সাতদিন অনশন পালন করার পর বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে অনশন ভাঙেন। তবে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।


সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  

লাইক দিয়ে পাশে থাকুন

রাফি গার্ডেন সুপার হোস্টেল।

 

আমাদের ভিজিটর
Flag Counter

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com