শাস্তি না হওয়ায় বাড়ছে ধর্ষণ-নির্যাতন : হাইকোর্ট

প্রকাশিত: ২:৫৫ পূর্বাহ্ণ, জুন ৪, ২০২১

শাস্তি না হওয়ায় বাড়ছে ধর্ষণ-নির্যাতন : হাইকোর্ট

সুরমা মেইল ডেস্ক : পর্নোগ্রাফি আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ এবং তা ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

 

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নিজ ঘরে বিবস্ত্র করে নারী নির্যাতনের ঘটনায় রুলের শুনানিতে বৃহস্পতিবার (০৩ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

 

আদালত বলেন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ীদের বিরুদ্ধে সাজা দেয়ার হার কম। ধর্ষণ ও নির্যাতন করে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হলে নির্যাতনের শিকার নারী এবং তাদের পরিবারে বিরূপ প্রভাব পড়ে।

 

শুনানিতে পর্নোগ্রাফি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় মোবাইল কোর্টের সাজা দেয়ার এখতিয়ার নিয়ে এ সময় প্রশ্ন তোলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক।

 

আদালত বলেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বিবস্ত্র করে নারী নির্যাতনের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বেগমগঞ্জ থানার এসআই ও এএসআই দায় এড়াতে পারেন না।

 

হাইকোর্টে আসা প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়েছে আজ। শুনানি শেষ না করে এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দিন ধার্য করেছেন আদালত।

 

এর আগে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে নিজ ঘরে ধর্ষণ চেষ্টা ও বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সরিয়ে নিতে ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

 

একই সঙ্গে ভিডিওটি সিডি বা পেনড্রাইভে কপি করে বিটিআরসিকে সংরক্ষণে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

 

পাশাপাশি ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভিকটিমের পরিবারকে সব ধরনের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে নোয়াখালীর এসপি নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

 

ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের বক্তব্য গ্রহণে পুলিশের কোনো অবহেলা আছে কি না- তা অনুসন্ধান করতে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (এডিসি) নেতৃত্বে জেলা সমাজসেবা অফিসার এবং সেখানকার স্থানীয় চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজের অধ্যক্ষকে ওই ঘটনা সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। অনুসন্ধান শেষে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়েছে।

 

কয়েকটি আদেশের পাশাপাশি রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে ওই নারীকে রক্ষায় এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অবহেলার কারণে বেগমগঞ্জের ওসি ও বেগমগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়েছেন আদালত।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

 

এর আগে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।

 

ঘটনাটি আদালতের নজরে আনা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে ৫ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ (ভার্চুয়াল) স্বঃপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ এসব আদেশ দেন।

 

আদালতে ওইদিন শুনানিতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, ইয়াদিয়া জামান, তানজিম আল ইসলাম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এ এম জামিউল হক ফয়সাল ও রাশিদা চৌধুরী নিলু। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ রাসেল চৌধুরী।

 

গত ২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ৩২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ৪ অক্টোবর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ ঘটনায় করা মামলায় এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন
  •  
WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com